শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
এম.কে. রানা, নিজস্ব প্রতিনিধি॥ জ্বালানী কাঠের সংকট, ব্যবহারে সুবিধা ও সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলেও জ্বালানী হিসেবে এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে আগের তুলনায় এলপিজি গ্যাস বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। তবে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর দায়সারা অভিযানের কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনুমোদনহীন এলপিজি গ্যাস বিক্রেতার সংখ্যাও। মুনাফালোভীরা বরিশাল নগরীসহ আশপাশের জেলা উপজেলা ও থানা এলাকায় কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও লাইসেন্স ছাড়াই জ¦ালানী গ্যাস বিক্রি করছে। যত্রতত্র এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করায় মারাত্মক প্রাণহানীর ঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। এদিকে বাজারজাতকৃত সিলিন্ডারগুলোর ধারণ ক্ষমতা বেশি দাবী করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকবল সংকটের কারণেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে অনুমোদনহীন এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী সচেতন মহলের।
বরিশাল নগরীর অলিগলি, পাড়া মহল্লাসহ জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে যত্রতত্র লাইসেন্স বিহীন এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের রমরমা কেনাবেচা হচ্ছে। সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, চায়ের দোকান, মুদি দোকান, ক্রোকারিজ ও ফ্ল্যাক্সিলোাডের দোকানেও হরহামেশাই বেচাকেনা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। পাশাপাশি সিলিন্ডারগুলো যেনতেনভাবে রাখায় যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। প্রায়শঃই দেশের আনাচে-কানাচে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহতের ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদজনক এ বিষয়টি কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না পেট্রোল ও গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, পেট্রোল ও এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের বিস্ফোরক লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি পত্র, মজুদের জন্য পাকা গোডাউন, এছাড়া লে-আউট নকশা থাকা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানছেন না এসব ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, এলপিজি গ্যাসের খুচরা বিক্রেতাদের জন্য আইনে কিছুটা ছাড় দেয়া আছে। আর এ সুযোগে অনুমোদন না নিয়েই তারা মাত্রাতিরিক্ত সিলিন্ডার মজুদ করছে।
বিস্ফোরক অধিদফতরের বরিশাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় এলপিজি গ্যাস মজুদের জন্য ১৮৩টি লাইসেন্স অনুমোদন নেয়া আছে। আর প্রস্তাবনা রয়েছে আরো ২৭টি লাইসেন্স। তবে বাস্তবে অনুমোদনহীন এলপিজি গ্যাস বিক্রেতার সংখ্যা ৫ শতাধিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে বরিশাল নগরী ও এর আশপাশের ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মেসি, মুদি মনোহরী, চায়ের দোকান, ক্রোকারিজ এমনকি ফ্ল্যাক্সিলোডের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। তবে হাট-বাজার ছাড়িয়ে এখন অলিগলিতেই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে বেশি। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিস্ফোরক লাইসেন্সতো নেই-ই, এমনকি ওই সব দোকানে ঝুঁকি এড়াতে অগ্নি নির্বাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। অবশ্য কোন কোন ডিলারের কাছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও তা ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নেই বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র অফিসার আলাউদ্দিন বলেন, বলেন যত্রতত্র গ্যাস বিক্রয়ের ফলে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে গ্যাস যতটা দূরত্বে ছড়িয়ে পড়বে আগুনের লেলিহান ঠিক সেই পর্যন্তই যাবে এবং এর ভয়াবহতা অনেক।
বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, অসাবধানতাবসত এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনো একটিতে আগুন লাগলে বাজারে পুরো ব্যবসায়িক এলাকা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই জননিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবসায়ীদের বিধি-বিধান মেনে ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
নতুন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি শিব শংকর দাস বলেন, যত্রতত্র এলপি গ্যাসের ব্যবসার কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। দূর্ঘটনা এড়াতে এসব ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
বরিশাল বিস্ফোরক অফিসের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম জানান, বাজারে যেসব এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হয় তার তাপ ধারণ ক্ষমতা ২৮/২৯ থাকলেও রয়েছে মাত্র ৭/৮। সেক্ষেত্রে লিকেজ ব্যতীত দুর্ঘটনার আশংকা নেই। অবশ্য লিকেজ হলে মানুষের ফুসফুসে গ্যাস ঢুকে যায় এবং যদি বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে ফুসফুস নালী পুড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, লোকবল সংকটের কারণে ২০১৯ সালে মাত্র ৩টি অভিযান পরিচালিত হলেও চলতি বছর কোন অভিযান চালানো হয়নি।
কেননা বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিস্ফোরক কর্মকর্তা মাসে দু’একবার বরিশাল আসলেও একমাত্র তিনি বিভাগের ৬ জেলায় নিয়মিত পরিদর্শন করার পাশাপাশি পুলিশও বিষয়টি দেখছেন বলে দাবী করেন।
Leave a Reply